অভীককুমার দে’র একগুচ্ছ নোয়াখালী কবিতা
১. জ্বর
দেশ আছে
বেশ আছে
আছে কালা ধন,
মানুষ আঁডে
হঁতে ঘাটে
কান্দে কত জন !
হাঁডা কোয়াল
ধরের বোয়াল
গরীব এগুন মরের,
হটঅ উডে
খবর ছুডে
রুগী টোয়ার জ্বরের!
এ্যতের দোষ
হ্যেতের দোষ
লাবের বেলায় কি ?
কনে জানে
ব্যেকে মানে
জো হুজুর জি…
২. দেশ বাচা
ঘরে মানুষ ঘরে তালা,
কালা ধলা কোনগা ভালা ?
মিছা কতার ভিত্রে কালি।
যেতে কয় হেতি জালি।
যারগই ঝরি ঘুন্টি অবা
কত রঙ্গের রক্ত জবা !
বাবু কয়, ঠাউর চাচা !
বাদ্দে হোশাক, দেশ বাচা।
৩. ঘরের হালা
আন্নের আঁর এ্যতের হ্যেতের হোলা লই যত জ্বালা !
বড্ডা বড্ডা লাডি দেই কেন্নে কইতাম আছি ভালা ?
এই ট্যেঁয়া হেই ট্যেঁয়া
ব্যেক খায় ছাড়া ডেঁয়া
হরা নাই লেয়া নাই আকাইম্যা ঘরের হালা।
টোই টোই করে বুলি কত মাইনষে লাড়ি যায়!
আতা কাতা বেচিঅ বাপে হুত বুলি ত খাবায়।
বাড়ি নাই ঘর নাই,
মানুষ ত, দিয়া নাই ?
যেতের গতর হতর অইলে কানাঅ ত রেনি চায়।
দেশের হোলা অইছে চলা মুয়ে কইলেই যত হাপ,
হডক চডক দেখুম কত কনচে অবা মনার বাপ ?
রাইতে দিনে ন্যেতাগিরি,
ঠোটের নিচে লম্বা বিড়ি,
গালের ওঁচে দাড়ি কোয়ান বাইরে ভিত্রে যত ধাপ!
৪. উল্টা কড়াই
বাতাস, উডের আর নামের,
উইটতে নাইমতে কেবল ঘুরের
ডাইল ঘুডনির মত।
গাসগাসড়া আরাকাঁচা তরকারি যন !
এমুইত্যুন হেমুই হরের, হেমুইত্যুন এমুই,
ভিত্রে ভিত্রে আঙফাঙ…
হোড়া মনের গন্দ বাইর অইতেই
ঝোলের মত জল ঢালের বিষ্টি।
আকাশের উল্টা কড়াই।
গোল্লার ভিত্রে ভাঙ্গাচুরা চলের
চুক্তি ভাঙ্গের
যুক্তি ভাঙ্গের
বাড়ি ভাঙ্গের
মন ভাঙ্গের
ব্যেককিচু গলি গেলেই রান্দা শেষ
রান্দৈন্যা বুজে,
গিলি খাইবো
খালি হেডের আঁত।
৫. চোক
এন্নে যে চোকেরমুই রেনি থঅ
জল বাইর অয় চরকবাই ছড়ার মত, আঁর
যেরুম, তোঁয়ারঅ কম ন…
সংসারের তাল ঠিক কৈত্যো কৈত্যো
চুয়াল্লিশেত্তুন আটে আইছে হঁত।
চোকের জল চোক চিনলে
চোকের জলে চোক ভিজলে
দিনে রাইতে মিশি থাইকতো সুখ,
এন্নে যে চোকেরমুই রেনি থঅ
বুকের ভিত্রে বেদনা করে আঁর
ডাক ভুলি যাইতো চায় অসুকের হাকি
উড়ি যাইতো চায় তোঁয়ার হাকির লগে।
এন্নে চোকেরমুই রেনি ন থাই চলঅ, আঁডি
আর অল্প আঁইটলে ভারতের বড় হঁত,
হঁত ধৈত্যাম হাইল্যেই…
এন্নে চোকেরমুই রেনি রেনি ভাত খাইতা হাইরবা।
৬. দাদুর চিডি
উগিত্তলে ইগ্গা বাক্সা আছিল ঠাম্মার,
সকাইল্যা বিয়াইল্যা উল্টাই চাইতো কবার,
আঁই মনে কইত্যাম খাইবার জিনিস, ইস…
ঠাম্মা কইতো–
এমুই আসই না, আঁর ভালা লাগে না,
বাক্সার ভিত্রে মোওর নাই, বুইজ্জতনি ?
আঁই মৈল্লে খুশি মতন নিস্।
ঠাম্মা মইরবার হরে–
বাবু আর কাক্কু মিলি লাড়া দিছে ব্যেক।
কাক্কু কয়– ‘কিয়া আছে চাই’,
বাবু কয়– কিচু থাইকলে আঁরঅ কিন্তু দিস্।
বাক্সার ভিত্রে দাদুর এক্কান হটঅ, কোয়ান বাংলা ট্যেঁয়া !
আঁত্তে লাগের ঠাম্মা বোদয় কদ্দুর হরে আইবো আবার,
দেইখবো, নাই মাইনষের হটঅ আর
অচল ট্যেঁয়ায় ছাতার গিজগিজ।
বাক্সার ভিত্রে বডৈন্যা এক্কান চিডি,
লেয়া আছে–
জোস্না,
হেদিকেঅ কষ্ট কইল্যা, এদিকেঅ…
আঁই যদি মরি যাই, তোঁয়ার আরঅ কষ্ট অইবো বেশি, জানি
রাইখছি হিল্যাই চঅ– এক বতল কষ্ট যাইবার বিষ।
৭. টক টক তৈ তৈ
আঁর মোরগ আঁর আঁস
কন্ডে গেলি? আয়
কত খানা ছিঁডি রাইখছি
হরেরগুনে খায়।
যেমুই হেমুই চোরের দল
ধৈত্যো হাইল্যে শেষ,
মাইলের ব্যেরাম, ব্যেক গেছে
যে অভাবের দেশ।
টক টক… তৈ তৈ…
কত ডাইকত্যাম আঁই ?
দিন ব্যেক্কান শেষের হঁতে
কন্ডে যাইতাম চাই !
৮. মুখা ব্যেরাম
চাল নাই ডাইল নাই
কত রং ঢং !
খালি হেড, তাতে নাড়ি
আদা- তুলসী- লঙ…
তুঁই ঘরে আঁই ঘরে
বাইরে তইলে কন?
ব্যেক কিচু ঘোলাই গেছে
মুখা ব্যেরাম যঅন।
কাডে দিন কেরুম কাডে?
আডে কান্দে বাজার,
রেল- রাস্তা- কুয়াত মরি
আঁডে আজার আজার !
বুকের কন হিডের কন
কনে কারে চাইবো ?
এন্নে যদি আর কিচু দিন…
মাইনষে মানুষ খাইবো।